মনপুরায় বেড়ীবাঁধ রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে গ্রামবাসী

মোঃ অহিদুর রহমান, মনপুরা থেকে : ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হাজির হাট বাজারের উত্তর পাশে পুরান থানা সংলগ্ন পাকা সংযোগ বেড়ীবাঁধটি নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য যুবসমাজের সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা উদ্যোগ নিয়েছেন। চরযতিন ও সোনারচর গ্রামবাসীর অর্থিক সহযোগিতায় ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিত্তবানদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে বেড়ীবাঁধ রক্ষার কাজ চলছে।

পাকা বেড়ীবাঁধ সড়কটি মনপুরার সর্বপ্রথম প্রধান সড়ক। বেড়ীবাঁধ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে দুইটি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। স্কুল-কলেজর শত শত শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগে পড়বে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। দ্রুত এসব পয়েন্টেও নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

গ্রামবাসীর সূত্রে জানা যায়, সড়কটি মনপুরার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। এই পাকা বেড়ীবাঁধের সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানে যায়। রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে যেতে পারবেন না। ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে দুইটি গ্রামের দশ সহস্রাধিক মানুষ। পাকা বেড়ীবাঁধ সংযোগ সড়কটি রক্ষার জন্য গ্রামের যুবসমাজের উদ্যোগে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় রক্ষার কাজ চলছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরযতিন গ্রামের যুব সমাজের সামাজিক সংগঠন ‘‘উত্তর চরযতিন সমাজ কল্যাণ সংগঠন” এর উদ্যোগে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে বেড়ীবাঁধ রক্ষার জন্য নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে “বেড়ীবাধ রক্ষা কমিটি ” গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির নেতৃত্বে বেড়ীবাঁধ রক্ষার কাজ চলছে।

গ্রামবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় ও বিত্তবানদের দানের মাধ্যমে একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। তহবিলে সঞ্চিত অর্থ থেকে পাকা বেড়ীবাঁধ সংযোগ সড়কটি রক্ষার কাজ দৃশ্যমান।

উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যুবসমাজের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আঃ রহমান বেড়ীবাঁধ রক্ষার জন্য কিছু জিও ব্যাগ প্রদান করেছেন। এই বেড়ীবাঁধের পূর্বপাশে নতুন বেড়ীবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

এ ব্যাপারে উত্তর চরযতিন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা আমিমূল ইহসান জসিম এই প্রতিবেদককে জানান, পাকা বেড়ীবাঁধ সংযোগ সড়কটি মনপুরার ইতিহাসের সাক্ষী। সংযোগ সড়ক বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গেলে দুইটি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। শত শত স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। মানুষের দুর্ভোগ লাগবে যুব সমাজ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সত্যিই তা প্রশংশনীয়। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং সার্বিক সহযোগিতা করছি।

এব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আঃ মান্নান মাস্টার শীর্ষবাণীকে বলেন, যুব সমাজ যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা আমি সমর্থন করি। আমিও যুব সমাজকে বেড়ীবাঁধ রক্ষার জন্য আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। যুব সমাজের পাশে বিত্তবানরা যেন এগিয়ে আসেন সে আহ্বান করি।

এ ব্যাপারে বেড়ীবাঁধ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ ছালাহউদ্দিন শীর্ষবাণী ডটকমকে জানান, বেড়ীবাঁধ সড়কটি মনপুরার সর্বপ্রথম প্রধান সড়ক। মনপুরার ইতিহাসের সাক্ষী। বেড়ীবাঁধ সড়কটি রক্ষার জন্য গ্রামের যুব সমাজ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সত্যিই প্রশংশনীয়। এই সংযোগ বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে গেলে দুইটি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে যেতে খুব কষ্ট হবে। পাকা বেড়ীবাঁধ সংযোগ সড়কটি রক্ষার জন্য যুব সমাজের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলার বিত্তবান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যুব সমাজের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী আঃ রহমান শীর্ষবাণীকে বলেন, বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে গেলে যাতে জনসাধারনের দুর্ভোগ না হয় তার জন্য বিকল্প বেড়ীবাঁধের কাজ চলছে। তবে যুব সমাজ বেড়ীবাঁধ রক্ষার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। আমিও ব্যক্তিগতভাবে সার্বিক সহযোগিতা করব।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি সেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, বেড়ীবাঁধ রক্ষার জন্য গ্রামের যুবসমাজ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা আমি সমর্থন করি। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যুব সমাজকে উৎসাহিত করার জন্য যা যা করার তা তিনি অবশ্যই করবেন বলে জানান।
শীর্ষবাণী ডটকম/প্রতিনিধি/এনএ