গুনা মাফ ও আল্লাহর নৈকট্যলাভে লায়লাতুল ক্বদর এ কারণীয়

ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ: লায়লাতুল ক্বদর আমাদের দেশে শবে ক্বদর হিসেবেই সমধিক পরিচিত। আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে এ রাতের অনুষ্ঠানাদি। আমাদের দেশ তথা উপমহাদেশে আলিম-উলামাদের কিছু কিছু বক্তব্য বা লিখনীতে রমাদানের শেষ দশক বা শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লায়লাতুল ক্বদর তালাশ করার কথা উল্লেখ থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে সেটা ২৭ তারিখই বিবেচ্য। এ ধারণাও তারা আলিমদের কাছ থেকেই পেয়েছেন। এ কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবেও চাঁদের দিনই ঠিক করে দেয়া হয় লায়লাতুল ক্বদরের তারিখ।

আমাদের দেশে উক্ত রাতের আমল বলতে তারাবিহর সালাতের পর কিছু সময় কয়েক রাকআত নফল নামায, ওয়াজ-নসীহত, দুআ-দুরুদ, মিষ্টান্ন বিতরণ এবং বাড়িতে গোস্ত-রুটিসহ উন্নত মানের খাবারের আয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। প্রকৃত অর্থে এটাই কী লায়লাতুল ক্বদর? আর এটাই কী উক্ত রাতের আমল? রাসূল স. নিজেই বলেছেন যে, আমাকে ঐ রাতের নির্দিষ্ট তারিখটি ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এজন্য বিশুদ্ধ হাদীসের বর্ণনামতে তিঁনি উক্ত রাতকে অন্বেষণের জন্য কখনো শেষ দশক, কখনো শেষ দশকের বেজোড় রাত আবার কখনো শেষ সাত দিনে সচেতন থাকার জন্য উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর নিজের ব্যক্তিগত আমল ছিল, শেষ দশক আসলে দুনিয়ার সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে কোমর বেঁধে পরিবার-পরিজন নিয়ে তিঁনি উক্ত রাত জেগে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন।
মধপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদিআরবের মক্কা-মদীনার মসজিদে শেষ দশকে তারাবিহর পরে দুই আড়াই ঘন্টা বিরতি দিয়ে জামাতের সাথে ক্বিয়ামুল্লাইলের আয়োজন করা হয়, যাতে লায়লাতুল ক্বদর থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা না থাকে। আমাদের দেশেও ধর্ম মন্ত্রণালয় বা মসজিদ কমিটি স্বউদ্যোগে এ কাজটি করতে পারেন। তাহলে অনেক মানুষ যারা ঘুমিয়ে বা অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করে রাত কাটান তারা সহজেই ক্বিয়ামুল্লাইলের মাধ্যমে লায়লাতুল ক্বদর অন্বেষণ করতে পারেন।

হাফিজ ইবনে কাছীর র. সূরাতুল ক্বদরের তাফসীর করতে গিয়ে লায়লাতুল ক্বদরের তারিখ নির্ধারণ সংক্রান্ত সকল বর্ণনা উল্লেখ করেছেন এবং মতভেদপূর্ণ বর্ণনাসমূহের সমন্বয় করতে গিয়ে এটাও বলেছেন যে, ২৭ তারিখকে অনেকেই প্রাধান্য দিলেও যে কোন রাতই লায়লাতুল ক্বদর হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। আবার প্রত্যেক বছর ভিন্ন ভিন্ন রাতও লায়লাতুল ক্বদর হতে পারে। সে অর্থে নিরাপদ হলো শেষ দশকের প্রত্যেক রাত, অথবা কমপক্ষে বেজোড় রাতগুলোতে নফল ইবাদতে মগ্ন থাকা।

এবার আসা যাক এ রাতে কোন ধরনের গুণাহ মাফ হবে সে প্রসঙ্গে। আল্লাহ তাআলা সূরা নিসা’র ৩১ নম্বর আয়াতে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “তোমরা যদি নিষেধ করা হয়েছে এমন কবীরা গুণাহ থেকে বিরত থাকো তাহলে আমি তোমাদের ছোটখাটো গুণাহগুলো মিটিয়ে দিব”। সূরা ফুরক্বানের ৭০ নম্বর আয়াতে আরেকটু আগ বাড়িয়ে তিঁনি বলেছেন, “যারা তাওবা করবে (কবীরা গুণাহ থেকে) এবং ভাল কাজ করবে তাদের ছোট গুনাহগুলো সংক্রিয়ভাবে আল্লাহ্ তাআলা নেকে পরিণত করে দিবেন”।
তাহলে আসুন প্রথমে তাওবার মাধ্যমে কবীরা গুনাহ্ থেকে নিজেকে মুক্ত করি এবং লায়লাতুল ক্বদরে বেশী বেশী নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার প্রয়াস চালাই। তবে সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, শঠতা, যেনা-ব্যাভিচার, চুরী-ডাকাতি, লুটপাট, অত্যাচার, নির্যাতন ও অপরের অধিকার নষ্ট করার মতো অন্যান্য কবীরা গুনাহর মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকে নফল ইবাদতের মাধ্যমে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা না চালাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে লায়লাতুল ক্বদরের মহিমায় মহিমান্বিত হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন!!

লেখক : ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ
অধ্যাপক, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কুষ্টিয়া।