‘আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে পারলে তালেবানদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল’

ভবিষ্যতে তালেবান নেতৃত্ব কী ধরনের নীতি অনুসরণ করবে তার ওপর নির্ভর করবে দেশটির জনগণের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা এমন মন্তব্য করে বলেন, তালেবানদের বিষয়ে দুর্নীতি না করার একটি সুনাম আছে। এ অবস্থায় তালেবান নেতৃত্ব কী ধরনের নীতি অনুসরণ করবে, তার ওপরই নির্ভর করবে দেশটির ভবিষ্যৎ। তারা যদি আফগান জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখে আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, তবে দেশটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তারা আরও বলেন, আফগান সমস্যা সামরিক নয়, রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। তালেবান উত্থানের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব কমে গেছে বলে মনে করেন তারা।

শনিবার ‘আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থান এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ও দেশটির ওপর ইহার প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সভায় এসব কথা বলেন বিশ্লেষকরা। ‘সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ : বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক কর্নেল (অব) মুহম্মদ ইসহাক মিয়ার পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মিসর ও জাপানে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সেরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিন।

ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মার্কিনিরা যথেষ্ট পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই আফগানিস্তানে এসেছিলেন। এলাকা সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল না। তারা জনগণের ভাষাও জানতেন না। তারা তালেবানদের ছোট করে দেখেছিলেন। আফগান সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না এবং সামরিক কৌশল সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের জেনারেল বানানো হয়েছিল। তালেবানরা কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং একের পর এক শহর দখল করছে, তাদের কোনো ধারণা ছিল না। এসব কারণেই আফগান সেনাবাহিনীর সহজ পরাজয় ঘটেছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত সেরাজুল ইসলাম বলেন, আফগানিস্তানে বিদেশি সাহায্য নয়, তালেবানরা নিজেরাই তাদের যোগ্যতার প্রমাণ করেছে এবং সফলতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব ছিল খুবই নগণ্য। তার ভাষায়, ভারত ভেবেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে দেশটিকে তাদের হাতে তুলে দেবে। আফগানিস্তানে মার্কিন গোয়েন্দাদের পাশাপাশি ভারতীয় গোয়েন্দারাও ব্যর্থ হয়েছে। কোনো সংস্থাই ধারণা করতে পারেনি, এত শিগগির তালেবানরা ক্ষমতা দখল করবেন। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে তিনি সমর্থন করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আফগানিস্তানে জনগণের সমর্থন নিয়ে যারা ক্ষমতায় আসবে, বাংলাদেশ তাদের সমর্থন করবে।

ড. আমেনা বলেন, তালেবানরা যদি আফগান জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখে আঞ্চলিক দেশসমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, তবে দেশটির ভবিষ্যৎ উজ্জল হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়ার যে পরামর্শ তালেবানদের দিয়েছেন, আলোচকরা সবাই তা সমর্থন করেছেন। তারা সবাই মনে করেন, সাম্প্রতিক আফগান পটপরিবর্তনে পাকিস্তান দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।

সেরাজুল ইসলাম বলেন, আফগানিস্তানে গত ৫০ বছরে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তার চেয়ে গত এক মাসে বেশি পরিবর্তন ঘটেছে। এখানে শত্রুর শত্রু দেশগুলো বন্ধু হয়েছে।

ড. সাখাওয়াত বলেন, আগের তালেবান এখনকার তালেবান অনেক তফাৎ। জাতীয় পর্যায়ে তালেবানদের নীতিনির্ধারক যারা আছেন, তাদের যদি সার্ভাইব করতে চায়, আর যদি খারাপ অবস্থা না চায়, যখন সরকার গঠন হবে, তখনই আমরা একটা সাইন দেখব, ভবিষ্যৎ আফগানিস্তান কোন পথে যাচ্ছে। ড. আমেনা বলেন, আফগানিস্তানে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথা বলা হচ্ছে, আমি মনে করি সেই সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।