অনেকে বুঝে না বুঝে সমালোচনা করে: প্রধানমন্ত্রী

পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেভাবেই রিশিয়ার সাথে চুক্তি করা হয়েছে ৷ তারপরও অনেকে বুঝে না বুঝে সমালোচনা করে।’

রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র প্রথম ইউনিটে স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার কারণে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পেরেছেন- এমন মন্তব্য করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান শুধু জমি দিয়েছে, কিন্তু রূপপুরে বরাদ্দ টাকা তারা নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে।’

তিনি বলেন, ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের দাবি তোলেন ৷ স্বাধীনতার পর তিনি আইএর সঙ্গে চুক্তি করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সব থেমে যায়। এরপরের শাসকরা এ প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার যোগ্য ছিলো না, নিতেও চায়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার এ প্রকল্প এগিয়ে নেয়। ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে তার সরকার রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর প্রকল্পকে চূড়ান্ত রূপ দেয়।

এর আগে সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র প্রথম ইউনিটে স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান ৷ তিনি বলেন, এ প্রকল্প পরিবেশবান্ধব বলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।

এরপর রূপপুর প্রকল্পের ওপর একটি ডকুমেন্টরি প্রদর্শিত হয়।

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। প্রকল্পের ঠিকাদার রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ অনুষ্ঠানে বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে বছরের পর বছর রাশিয়া যে উৎকর্ষতা অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আজ রূপপুরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কিছু ব্যবস্থাপনা রূপপুর প্রকল্পকে করেছে সবচেয়ে নিরাপদ। করোনা মহামারির মধ্যেও সময় মতো প্রকল্প শেষ করতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পর্কে জনবল তৈরিতেও সহযোগিতা করছে ৷ এ প্রকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও জিডিপি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে ৷ প্রকল্পের নিরাপত্তাকে রোসাটম সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিজ্ঞানমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এই ঘটনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর ফলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশ আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন ইয়াফেস ওসমান।

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, ইউনিট-১ এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে রিয়াক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের পারমাণবিক যন্ত্রাংশ স্থাপন সম্পন্ন হলো। এর ফলে এই ইউনিটের রিয়াক্টর ভবনের ভেতরের কাজ প্রায় শেষ হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।