লকডাউন শিথিল নয়, প্রয়োজন দু’সপ্তাহে কারফিউ!

হাসান আল বান্না : করোনা ভাইরাসের প্রকোপ যখন ক্রমাগত বেড়েই চলছে এবং মৃত্যুর হারও বেশি। এহেন পরিস্থিতিতে সরকার সীমিত পরিসরে সাধারণ ছুটি বাতিল এবং গণপরিবহনও চালু করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। যদিও সীমিত পরিসর শব্দটির সুনির্দিষ্ট ব্যাখা আজও সরকার পরিষ্কার করেনি। এমন অর্থহীন বা ব্যাখাহীন শব্দ কেন বারবার সংযোজিত করা হচ্ছে সেটাও বোধগম্য নয়।

রমজানে ঈদের জন্য শপিংমল খুলে দেয়ার পরপরই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি দেখছি প্রতিনিয়ত। যদিও টেস্ট সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। যখন প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে সেখানে সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি করে কারফিউ দেওয়া উচিত ছিল অন্তত আগামী দুই সপ্তাহ। আমরা দেখেছি লকডাউন সময়কালীন গার্মেন্টস নাটক মঞ্চস্থ হয় তখন নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠে হটস্পট। এরপর নারায়ণগঞ্জ থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে যায় করোনা। একটা সময় বিদেশ ফেরতদের সারাদেশে খোঁজে খোঁজে যেভাবে হোম কোয়ারান্টাইন রাখতে বাধ্য করেছিল সরকার ঠিক তেমনিভাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলায় গমন করা নাগরিকেরও সারাদেশের পুলিশ খোঁজে খোঁজে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখে। কিন্তু লাভ হয়নি। করোনা ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপী। আবার ঈদের আগে শপিংমল খুলে দেয়ার পর একই কায়দায় ঢাকা শহরও হয়ে ওঠে হটস্পট। এখন ভাবুন তো? দুই কোটি মানুষের বসবসা এই শহরে যদি সীমিত পরিসরের আদলেও এক কোটি মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে তবে যেভাবে সংক্রমণের বিস্তার ও লাশের সারি বৃদ্ধি পাবে তখন এর দায় কে নিবে?

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে দেশের অর্থনীতির সমাধান কি? দেখুন বাংলাদেশ যখন বিশ্বায়নের অংশ তখন এই প্রশ্নের খুব বেশি মূল্যায়ন থাকে না। কারণ সারা দুনিয়ার বিমান পরিসেবা বন্ধ। আপনি যতই আপনার দেশ লকডাউন খুলে দিন আপনি চাইলেই বিশ্ব বাজারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। ইতিমধ্যে প্রায় উন্নত সকল রাষ্ট্র বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে যাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক তাদের দেশের এয়ারপোর্টে বাংলাদেশের জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। পাশবর্তী দেশ ভারতেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ – ভারতের পোর্টগুলো এখনও বন্ধ রেখেছে। আন্তর্জাতিক স্থল বন্দর সমূহেও বাংলাদেশর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কেন পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়তে দেওয়ারও কোনই সম্ভাবনা নেই। সুতরাং করোনা নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া কৃত্রিমভাবে অর্থনীতি স্বাভাবিক করার ভাবনা শুধু অজ্ঞতাই না বরং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত হবে আগামী দুই সপ্তাহ ২৪ ঘণ্টা কারফিউ দিয়ে তারপর পরিস্থিতির আলোকে লকডাউন তুলে নেওয়া। নতুবা উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বাংলাদেশের জন্য কখনও সম্ভব না।

লেখক : হাসান আল বান্না, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক