বেদনার সাজে বর্ণিল ঈদ

হাসান আল বান্না : পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঈদ আর আসেনি। একসাথে সারা পৃথিবীর মানুষ একই পদ্ধতিতে ঘরে বসে ঈদ উদযাপন করেছে। সাক্ষাৎ এ সালাম বিনিময়, কোলাকুলি, ঈদগাহ নামাজ, নতুন জামা ছাড়া ঈদ, স্বজন ও প্রিয়জনদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি কারো। অনেকে পরিবার ছাড়াই ঈদ উদযাপন করেছে। করোনায় অর্থনৈতিক মন্দার ফলে কারো কারো বাড়িতে হয়তো রান্নাও হয়নি। অসহায় অনেক মানুষ হয়তোবা না খেয়েও ঈদ পাড়ি দিয়েছেন। সারাদেশের করোনা সংক্রমণের নিস্তব্ধ পরিবেশেই ঈদের আগমুহূর্তে হানা দেয় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। চালায় তাণ্ডব। শতবছরেও এমন তাণ্ডব দেখেনি দক্ষিণ এশিয়ার দুই বাংলার মানুষ। প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ লণ্ডভণ্ড। সেই অবিভক্ত ভারতের রাজধানী কলকাতা সৃষ্টির পর এযাবৎ কালেও এমন ঘূর্ণিঝড় এর তাণ্ডবের মুখোমুখি হয়নি কলকাতা। যা আম্ফানে হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সাতক্ষীরা ও খুলনার অংশ। কোন কোন এলাকায় পানিতে দাঁড়িয়ে মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেছে।

প্রতিবছরই আমরা পরিকল্পনা করি, মাহে রমজান আসে। আর রমজান এলেই তারপর ঈদ। সকল শ্রেনী পেশা মানুষের সব পরিকল্পনা আর ব্যস্ততা তৈরি হয় রমজানকে এবং ঈদকে ঘিরে। কিন্তু একবারও কি মানুষ ভেবেছিল এমন রমজান আর ঈদ পাড়ি দিতে হবে? মজার বিষয় হচ্ছে, ইতিহাসে এই প্রথম একটি ঈদ কেটেছে ধনী ও গরীবের একই ভাবে। স্রষ্টা এভাবেই আকাশ পাতাল ব্যবধানের পৃথিবীকে একটি সমান্তরাল রেখায় দাঁড় করিয়েছেন।

আসলে করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এ দুই তাণ্ডব থেকে আমরা বুঝি, জীবন কখনও একই প্রক্রিয়াই চলে না। আল্লাহর নিয়মে সকালে সূর্য উঠে আর বিকেলে অস্তমিত হলেও মানুষের জীবন সবসময় স্বাভাবিক গতিতে থাকেনা। তাই যখন যেমন তখন তেমন ভাবেই নিজেকে মানিয়ে নেওয়াই হচ্ছে জীবন সমূদ্র পাড়ি দেওয়ার যুগোপযোগী পদ্ধতি।

করোনায় পুরো পৃথিবী কাঁপছে। স্তম্ভিত গোটা দুনিয়া। স্তব্ধ যোগাযোগ ব্যবস্থা। মৃত্যু আর লাশের সারি দীর্ঘায়িত হচ্ছে ক্রমাগত। তবে আশার বাণী হচ্ছে, পৃথিবীর অনেক দেশই তাদের লকডাউন তুলে নিয়েছে। আবার দক্ষিণ এশিয়াই হঠাৎ প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মাঝে কেটে যায় রমজান এবং ঈদ। সামনে আসছে কুরবানীর ঈদ। কুরবানী ঈদের আগেই পৃথিবী থেকে করোনা ভাইরাসের স্থায়ী কোরবানী হোক স্রষ্টার নিকট এই প্রত্যাশায় সাদামাটা ঈদের বিদায়ী শুভেচ্ছা।

লেখক : হাসান আল বান্না, কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক