প্রসঙ্গ: পিএসসি’র চেয়ারম্যান নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রী যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্যস্থানে বসাতে ভুল করেন না

অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু: জননেত্রী শেখ হাসিনা সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও মেধাবীদের যে মূল্যায়ন করতে ভুল করেন না সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান পদে জনাব মোঃ সোহরাব হোসাইনকে নিয়োগের মাধ্যমে সেটা আবার প্রমাণিত হলো। সোহরাব হোসাইন স্যার এর আগে শিক্ষা সচিব ছিলেন। সেই সুবাদে পদাধিকার বলে তিনি বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। আমার পরম সৌভাগ্য শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব হওয়ার সুবাদে আমি এ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঁচজন সচিবের সাথে ( সৈয়দ আতাউর রহমান, কামাল আবু নাসের চৌধুরী, সাদিক স্যার, নজরুল ইসলাম খান, মোঃ সোহরাব হোসাইন, মোঃ মাহবুবুর রহমান) কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যেহেতু কল্যাণ ট্রাস্ট দেশের সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর আর্থিক সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান সেহেতু বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। সেই সুবাদে সম্মানিত সচিব মহোদয়দের সাথে কাজের মাধ্যমে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

আমি কল্যাণ ট্রাস্টের কাজ করতে গিয়ে সোহরাব স্যারের সাথেও আমার চমৎকার সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। এ কথা আমি নির্ধিদায় বলতে পারি তিনি অত্যন্ত সৎ, যোগ্য, কর্মঠ, কর্তব্য পরায়ন, ন্যায়নিষ্ঠ একজন খাঁটি দেশপেমিক সরকারি কর্মকর্তা। কাজ কিভাবে আদায় করতে হয় তার কাছ থেকে শিখেছি।

স্যারকে কখনো কোন কাজ ফেলে রাখতে দেখিনি। প্রত্যকটি ফাইল স্যার নিজে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে তারপর অনুমোদন দিতেন। স্যারের কাছে কোন কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ ছিল না।

২০১৫ সালের জাতীয় বেতনস্কেলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দিগুণ হওয়ায় কল্যাণ ও অবসর সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে আমরা চরম অর্থ সংকটে সম্মুখীন হই। সংস্থা দুইটিতে প্রায় আশি হাজার আবেদন অনিস্পন্ন থেকে যায়। এসময় কল্যাণ এবং অবসর বোর্ডের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কল্যাণ এবং অবসর বোর্ডের জন্য বিশেষ বরাদ্দ আনার ব্যাপারে তৎকালীন শিক্ষা সচিব ও ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসাইন স্যারের ভুমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সংকট সমাধানে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় মিটিং,প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ,যেখানে যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই স্যার করেছেন এবং আমাদের দিয়ে করিয়েছেন। আমাদের প্রচেষ্টায় সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে বিশেষ বরাদ্দ সহ ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছিল। সেদিন সেই বরাদ্দ পাওয়া না গেলে কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের কর্মকাণ্ড চালানো হয়ত সম্ভব হতো না।

বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা অনেকেই হয়ত জানেন না। ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতা প্রাপ্তির ব্যাপারে সোহরাব স্যারের অসামান্য অবদান ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকা বের করে আনার পুরো ঘটনাটি আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। বিশেষ করে কল্যাণ এবং অবসর বোর্ডের সংকট নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে প্রধান করে যে হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটিতে অর্থ সচিব,শিক্ষা সচিব,মাউশির ডিজি,কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক ছিলেন। অনেকেরই হয়ত জানা নেই কল্যাণ ও অবসর বোর্ডে যে ১৬৭৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ ছিল তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ছিল রাষ্ট্রীয় আপদকালীন ফান্ডের। এটা যে শিক্ষকদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসার কত বড় নিদর্শন তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? কল্যাণ ও অবসর বোর্ড বিষয়ে আলোচনা শেষে আমি সেই সভায় ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার বিষয়টি উত্থাপন করে নির্বাচনের আগেই তা কার্যকর করার অনুরোধ করেছিলাম যা বিবিধ আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে জনাব সোহরাব হোসাইন স্যারের অসামান্য অবদান রয়েছে। গত সংসদ নির্বাচনের পুর্ব মুহূর্তে ২৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার আধা ঘন্টা আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে যদি সেদিন ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার ঘোষনা না দিতেন তাহলে আজো পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হতো কিনা যতেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ২৮ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার ব্যাপারে কেউ জানতেন না। সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কল্যাণ ও অবসর বোর্ড,বঙ্গবন্ধু ট্রাষ্ট সহ ১০ টি চ্যারিটি সংস্হাকে ১০০ কোটি টাকা অনুদানের চেক হস্তান্তরের কথা ছিল। আমি এবং অবসর বোর্ডের সচিব সাদি ভাই কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের ২০ কোটি টাকার অনুদানের চেক গ্রহণ করার কথা।
অনুষ্ঠানের আগের দিন সোহরাব স্যার ও আমি আলোচনা করি এই সুযোগে ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা ঘোষণা না করাতে পারলে ইলেকশনে আগে সেটা সম্ভব হবে না। কারণ পরদিন সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন নির্ধারিত অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকার সাথে সাথেই স্যার এবং আমি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে যাই। প্রটোকল ভেঙেই স্যার ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার সারসংক্ষেপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করেন। আমি তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বললাম আপা একটু পরেই তফসিল ঘোষণা হবে। এখন যদি আপনি ঘোষণা দেন নির্বাচনের পূর্বে শিক্ষকরা ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা পাবেন না।
মুল অনুষ্ঠানের শুরুতেই সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের বহু কাঙ্ক্ষিত ৫% ইনক্রিমেন্ট ও ২০% বৈশাখী ভাতার ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন এবং কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের জন্য ৭৫৭ কোটি টাকার বিশেষ চেক হস্তান্তর করেন।

লেখক: অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু
সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) ও সদস্য সচিব, বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট।