চরফ্যাশনের সেই খাদিজাকে বেওয়ারিশ দাফন: হত্যায় জড়িত অভিযোগের তীর পিতা ও ফুফুর দিকে

আমিনুল ইসলাম, চরফ্যাশন: চরফ্যাশন পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডে পানিভর্তি বিল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত খাদিজার (১৪) লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে ভোলা আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে দাফন করা হয়েছে৷

জাহানপুর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের ফারুক মিয়ার মেয়ে মৃত খাদিজাকে গ্রহণ করেনি তার পরিবার৷ মেয়ের এমন রহস্যময় নিশংস মৃত্যুর খবর তার পরিবার জেনেও একনজর দেখতে আসেনি৷ না চেনার ভান করে গ্রহণও করিনি মেয়ের লাশ৷ মৃত খাদিজার নামের জায়গায় লেখা হয়েছে বেওয়ারিশ৷ অভিভাবকের এমন আচরণ দেখে পুরো চরফ্যাশন উপজেলার মানুষ মেয়েটির বাবা ও ফুফুর দিকে মেয়েটির হত্যার সাথে জড়িত বলে ইঙ্গিত করছেন?

অজ্ঞাত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চরফ্যাশন থানার এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত উদ্ধার করা মেয়েটির ফুফু ও ফুফাতো বোনকে তদন্তের স্বার্থে থানায় ডেকে আনা হয়েছে৷ দীর্ঘ সময় ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জবানবন্দি নেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়৷

সরেজমিনে জাহানপুর ইউনিয়নের মৃত খাদিজার বাড়ির প্রতিবেশীরা শীর্ষবাণীকে জানান, অর্থের লোভে মেয়েটির অমতে বাবা ও ফুফু মিলে ঢাকায় এক সন্তানের জনক বয়স্ক তোফায়েলের সঙ্গে অপ্রাপ্তবয়স্ক খাদিজাকে বিয়ে দেন৷ স্বাভাবিকভাবে বয়স্ক স্বামীকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না খাদিজা। ইতোপূর্বে একাধিকবার মেয়েটির বাবা ফারুক ঢাকায় স্বামীর নিকট দিয়ে আসলে কাউকে না বলে আবার চরফ্যাশনে চলে আসতো খাদিজা৷ ওর “মা” নেই৷ মাকে পিতা ফারুক অনেক আগেই ডিভোর্স দিয়েছিলো৷
মেয়ের এমন আচরণ, স্বামীকে মেনে না নেওয়া এবং অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে সন্দেহে মধ্যযুগীয় কায়দায় পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করতো পাষণ্ড পিতা৷ মেয়েটির ফুফুও পিতার পাষণ্ডতায় সহযোগিতা করত বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এসকল ঘটনায় মেয়েটির বাবার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়৷ ইতিমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন মেয়েটির বাবা ফারুক৷ কোথাও খুঁজে তার সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ খাদিজার ফোন কল ট্রাকিং করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী৷

চরফ্যাশন থানা অফিসার ইনচার্জ মনির হোসেন মিয়া বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক৷ আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করব৷ ইতিমধ্যে প্রয়োজন মনে করে কিছু লোকের সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১২সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডে পানি ভর্তি বিলের মধ্য দেখে খাদিজা (১৪) নামের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়৷ ওইদিন চরফ্যাশন পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মাথায় মফিজুল মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে বিলের মধ্যে সকাল ৯টায় একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা৷ লাশ দেখে কিছুক্ষণের মধ্যেই আশেপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে৷ এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চরফ্যাশন থানা পুলিশ যুবতীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে৷ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মেয়েটির নাম খাদিজা৷ মৃত মেয়েটি চরফ্যাশন উপজেলা জাহানপুর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের ফারুক মিয়ার মেয়ে৷
শীর্ষবাণী/এনএ