‘কল্যাণ ট্রাস্ট শতভাগ স্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান: যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ প্রস্তুত’

অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু : বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের অবসরকালিন সময়ে আর্থিক সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান কল্যাণট্রাস্ট ও অবসর বোর্ড দুইটি শিক্ষকদের প্রদত্ত চাঁদায় পরিচালিত হয়ে থাকে। সংস্থা দুইটির আইন অনুযায়ী তাদের অবসরে যাওয়ার সময় প্রাপ্ত সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী তাদের চাকরির বয়স হিসেব করে তাদের পাওনা পরিশোধ করতে হয়। ২০১৫ সালে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন ১০০% বৃদ্ধি পাওয়ায় কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের চরম আর্থিক সংকট নিপতিত হলে আমাদের প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৬৭৭ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য বরাদ্দ ৩২৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা অবসর বোর্ডের জন্য। উক্ত টাকা তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষকদের কল্যাণ সুবিধা বাবাদ প্রদান করা হয়। এছাড়াও কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে ৩৫ কোটি টাকা সীড মানি প্রদান করেন যা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ মুনাফা প্রদানকারী ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসাবে সঞ্চিত রয়েছে এবং এর মুনাফার দিয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের অফিস খরচ ম্যান্টেইন করা হয়। উল্লেখ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া অতীতে কোন সরকার কল্যাণ ট্রাস্টে একটি টাকা ও বরাদ্দ দেয়নি।

রাতারাতি গজিয়ে উঠা ফেইসবুক ভিত্তিক কতিপয় সংগঠন ও শিক্ষক নামদারি কতিপয় শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল্যাণ ট্রাস্ট সম্পর্কে মিথ্যা ভিত্তিহীন,কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সমাজে গুজব ছড়িয়ে শিক্ষক সহ জনমনে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।

বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূইয়া ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের সুপারিশে জনবল কাঠামোর বাইরে নিয়মবহির্ভূতভাবে মীরপুরের একটি স্কুলে চাকরি পাওয়া এবং অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত এবং হাজতবাসকারি জিয়ার সাচ্চা সৈনিক থেকে রাতারাতি বঙ্গবন্ধু প্রেমী দাবিদার ফেইসবুক সর্বস্ব একটি সংগঠনের একজন স্ব-ঘোষিত নেতা কল্যাণ ট্রাস্ট সম্পর্কে আজগুবি অভিযোগের মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করছেন।

২০১৫ জাতীয় বেতন স্কেলে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কল্যাণ ট্রাস্টের আইন অনুযায়ী সর্বশেষ স্কেলে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে কল্যাণ ও অবসর বোর্ডে প্রায় ৮০ হাজার আবেদন অনিস্পন্ন থেকে যায় এমতাবস্হায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলে তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের দুর্দশা লাগবে কল্যাণ ও অবসর বোর্ডের জন্য ১৬৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। কল্যাণ ট্রাস্টে মোট ৩৬০ (তিনশত ষাট কোটি) কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি টাকা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় অবসর বোর্ডে। অবসর বোর্ডে সীড মানি দেওয়া হয় ৫৩৫ (পাঁচশত পয়ত্রিশ) কোটি এবং কল্যাণ ট্রাস্টে দেওয়া হয় ৩৫ (পয়ত্রিশ) কোটি টাকা। কল্যাণ ট্রাস্টে জনবল সংকট থাকায় শিক্ষকদের দুর্দশা লাগবে মন্তনালয়ের বিশেষ সহযোগিতায় আউটসোর্সিং করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বরাদ্দকৃত সব টাকা দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়।

মতলববাজরা গুজব ছড়াচ্ছে সরকার থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট নাকি ২০০০ (দুই হাজার কোটি) টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা শিক্ষকদের না দিয়ে ব্যংকে জমা রেখে আমরা নাকি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছি। কল্যাণ ট্রাস্ট জাতীয় সংসদ পাশ করা আইন দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা মন্ত্রীনালয়ের অধিনস্হ একটি সেবামূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা সচিব মহোদয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারি বেসরকারি ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি হাইপাওয়ার কমিটি দ্ধারা কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে এককভাবে ট্রাষ্টি বোর্ডের সচিবের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। একজন সচেতন শিক্ষকের অন্তত এটা জানার কথা।

মতলববাজরা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিস খরচ নিয়েও আজগুবি সব অপপ্রচার চালাচ্ছে। বর্তমান অর্থ বছরে কল্যাণ ট্রাস্টের বার্ষিক বাজেট ৬০১ (ছয় শত এক ) টাকার কিছু বেশী। এরমধ্যে শুধু কল্যাণ সুবিধা প্রদানই ৬০০ (ছয় শত) কোটি টাকা। বাকি টাকা ষ্টাফ সেলারী সহ অন্যান্য খাতে খরচ হয়। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তির আওতায় কল্যাণ ট্রাস্টের তিনমাসের অফিস খরচ বাবদ ২৬ লক্ষ৷ টাকা খরচ নিয়েও মনগড়া কল্পকাহিনি তৈরি করে গুজব ছড়াচ্ছে। অথচ তিন মাসে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনই দিতে হয় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা । এছাড়াও একটি অফিসে ২০/২২ টি খাতে দৈনন্দিন খরচ রয়েছে। যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ১৫/১৬ খাতে দৈনন্দিন খরচ রয়েছে। কল্যাণ ট্রাস্টে তিন মাসে যে খরচ হয় বাংলাদেশের বড় বড় স্কুল কলেজেও এর চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়ে থাকে। তাছাড়া সরকারি কোন অফিসে সরকারি বিধির বাইরে একটি টাকাও খরচ করার কোন সুযোগ নেই। মতলববাজ একশ্রেণির শিক্ষক যারা মনগড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ায় তাদের কি শিক্ষকতা পেশায় মানায়? তাদের এরূপ আচরণে সমাজে শিক্ষকদের মানমর্যাদা কি ক্ষুন্ন হচ্ছে না? শিক্ষকরা সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন না? সারা দেশের শিক্ষক সমাজ যখন ঐতিহাসিক মুজিব জন্মশতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের শুভ সূচনার স্বপ্নে বিভোড়, আমরা যখন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য আপ্রাণ লড়ে যাচ্ছি তখন এসব গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি কি জাতীয়করণের দাবিকে দুর্বল করছে না? বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি ও শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং কতিপয় শিক্ষকের এরূপ দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণ শিক্ষকদের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আর এতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ বিরোধী রাষ্ট্রের প্রভাবশালী শক্তিকেই উৎসাহিত করছে। অতীতেও আমরা লক্ষ করেছি যখনই জাতীয়করযণের কাজ এগিয়ে যায় তখনই এই অপশক্তি তৎপর হয়ে উঠে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে কারা ইন্দন যোগাচ্ছ সেটাও খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটের মধ্যও কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সেবা প্রদান করে গেছে। সর্বোচ্চ নিষ্ঠা,সচ্ছতা ও সততার সাথে অনলাইনে BFT ‘র মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারীদের যার যার ব্যাংক হিসাবে তাদের পাওনা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আজ শিক্ষকরা যে BFT ব্যবস্থায় বেতন গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে কল্যাণ ট্রাস্টে সে BFT চালু করেছি ২০১৭ সালে। এই টাকা কল্যাণ ট্রাস্ট কতৃপক্ষের ছুয়ে দেখারও কোন সুযোগ নেই। কল্যাণ ট্রাস্ট শতভাগ স্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে যে কোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আমি প্রস্তুত রয়েছি। উল্লেখ কল্যাণ ট্রাস্টে প্রতিষ্ঠার পর বিগত ১৮ বছরে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করেছে ২৭৯ কোটি টাকা আর দায়িত্ব থাকাকালীন ১১ বছরে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করেছি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। ইতিহাস জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারই সৃষ্টি করতে পারে সেটা আমি প্রমাণ করে দেখিয়েছি।

কল্যাণ ট্রাস্টের যে কোন বিষয়ে কারো কোন জানার থাকলে,প্রশ্ন থাকলে আপমারা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসে আসুন। আপনাদের চায়ের দাওয়াত থাকল। আমি যদি আপমাদের প্রশ্নের কিংবা তথ্যের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারি তখন আপনারা আমার বিরুদ্ধে সমালোচনা করুণ,লিখুন আমি সেটাকে স্বাগত জানাব। দয়া করে তথ্য না জেনে কারো প্ররোচনায় অশিক্ষক সুলভ আচরণ করে শিক্ষকদের হেয় করবেন না।

যে কোন গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ গঠনমুলক সমালোচনার মাধ্যমে ভুলভ্রান্তি শোধরানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়ে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে চায় তারা মতলববাজ। এদের রুখে দাড়ানোর এখনই সময়।

(লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা, সাধারণ সম্পাদক- স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ, সেক্রেটারি- ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব টিচার্স ইউনিয়ন, সচিব- শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়)